কাপিং থেরাপি (হিজামা) কিভাবে কাজ করে?
হিজামা কিভাবে কাজ করে এটার পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী। প্রায়ই এই প্রশ্ন ওঠে যে, যে সকল রোগের ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা বিফল হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে হিজামা কিভাবে কাজ করে। হিজামার উপকারীতা নিয়ে প্রচলিত প্রচুর থিওরি আছে। আমরা এই সকল থিওরি নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করব যাতে করে হিজামা কিভাবে কাজ করে এই ব্যাপারে আমরা একটি সামগ্রিক ধারনা পেতে পারি।
তাইবাহ থিওরিঃ
আমাদের বিভিন্ন অর্গ্যান ও শরীরবৃত্তীয় সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের শরীর একটি ফিজিওলজিক্যাল হোমিওস্ট্যাসিস বা সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। রোগের সৃষ্টি হয় এই ফিজিওলজিক্যাল সাম্যাবস্থার বিপরীতে গিয়ে। এক এক রোগের সৃষ্টির কারন খুঁজতে গেলে দেখা যাবে সকল রোগেরই শরীরের এই সাম্যাবস্থা বিঘ্নিত করার বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। সকল চিকিৎসার মধ্যে হিজামার সৌন্দর্য এটাই যে, হিজামা একটি এক্সক্রিয়েটরি চিকিৎসা পদ্ধতি, অর্থাৎ এটি শরীর থেকে সাবসট্যান্স বের করে দেয়, ঢোকায় না। অন্যদিকে অন্য সকল চিকিৎসা ইন্ট্রোডাক্টরি অর্থাৎ শরীরে কোন কিছু ঢুকিয়ে দেয়। আমরা এখানে একটা সিম্পল থিওরি নিয়ে আলোচনা করব যা হিজামার উপকারীতার কার্যকরন বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করবে।
তবে একটা ব্যাপার মনে রাখা জরুরী যে হিজামা প্রত্যক্ষভাবে প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের শত্রু। কথাটা এভাবে বলার জন্য দুঃখিত। আসলে প্রচলিত চিকিৎসা বলতে আমি সেই চিকিৎসাকে বোঝাচ্ছি যা আসলে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ আপনার ব্যাথা হবে, আর ব্যাথার জন্য পেইন কিলার খাবেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পেইনকিলার খাওয়ার ফলশ্রুতিতে আপনার কিডনির কার্যকারীতা নষ্ট হবে। আর এই কিডনি ফাংশান লস এর সাথে সাথে তৈরি হবে হাইপারটেনশান, কার্ডিয়াক প্রবলেম, এনিমিয়া। ফলশ্রুতিতে শরীরে ঢুকবে আরও ঔষধ। শুধু ঢুকবে যে তা নয়, প্রতিনিয়ত ঢুকবে। আপনার শরীর ধীরে ধীরে পরিণত হবে একটা টক্সিক গার্বেজে। আস্তে আস্তে হোমিওস্ট্যাসিস লস হবে। শরীরের প্রতিটি অর্গ্যান এর সাথে মানিয়ে নিতে চাইলেও পারবেনা। শেষে হবে সামগ্রিক সিস্টেম লস। আর এই সিস্টেম লসই হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটের জন্য ব্যাবসার সূত্র।
ওয়েট কাপিং বা হিজামার যে এক্সক্রিয়েটরি ফাংশান বা শরীর থেকে পদার্থ বের করে দেয়ার ক্রিয়াকে কিডনির সাথে তুলনা করা যায়। হিজামা কিছুটা আর্টিফিশিয়াল কিডনির মত কাজ করে। এটা চামড়ার ক্যাপিলারি বা অতিসুক্ষ রক্তনালী থেকে সাইজ ডিপেনডেন্ট এক্সক্রিয়েশান করে। কিন্তু হিজামার ক্ষেত্রে পার্টিকেল এক্সক্রিয়েশানের যে প্রেশার তা রেনাল গ্লোমেরুলাই থেকে কিছুটা বেশি থাকে।
যেখানে কিডনি থেকে এক্সক্রিয়েশান হাইড্রোফিলিক ম্যাটেরিয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সেখানে হিজামা হাইড্রফিলিক ও হাড্রোফোবিক সকল ধরনের ম্যাটেরিয়াল এক্সক্রিট করতে পারে, যেমন লাইপোপ্রোটিন। আর এভাবে এটা স্কিনের ন্যাচারাল এক্সক্রিয়েটরি রোলকে এনহ্যান্স করে।
আমাদের ধারণা অনুযায়ী হিজামা সার্জিক্যাল এ্যাবসেস ড্রেনেজ এর চেয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে।
হিজামার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হলে মানুষের শরীর বিভিন্ন ঔষধের অনেক ধরনের সাইড ইফেক্ট এবং ঔষধের মধ্যকার ইন্টারএ্যাকশান থেকেও বাঁচবে। হিজামার রোগ ভাল করার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে রিসার্চাররা হিজামার মেকানিজম পুরোপুরি নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
হিজামা সব চেয়ে বেশি উপকারী যে কোন ধরনের ব্যথা উপশমে। হোক সে ব্যথা নতুন বা পুরানো! কিংবা হোক তা শরীরের যে কোন জায়গায়!!
হিজামা শেষে ব্যথা কমতেই সবার কমন প্রশ্ন – কিন্তু কীভাবে কমল??
কোন একটি প্রদাহ জনিত প্যাথলজিক প্রসেস যখন আমাদের শরীরে শুরু হয় তখন আক্রান্ত স্থানে অনেকগুলো পরিবর্তন হয়। সবার আগে সেখানকার রক্তনালীর স্বাভাবিক গঠনে রদবদল হয়। এর স্বাভাবিক
permeability-র ধরন বদলাতে শুরু করে। রক্ত নালীগুলো অনেক বেশি leaky হয়ে যায়।
বিভিন্ন ধরনের রক্তকণিকা যা দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহের জন্যে দায়ী সে গুলো এসে জায়গাগুলোতে ভীড় করে। রক্তনালীগুলোর Integrity নষ্ট হয় বলে তা থেকে সহজে নানা পদার্থ বের হয়ে কোষের আশে পাশের জায়গা গুলোতে জড় হয়।
এখানে যে নার্ভ এন্ডিং গুলো থাকে তা থেকে লোকাল পেইন মেডিয়েটর বের হয় (substance
P, interleukin, Neuropeptide, Vasoactive substance, calcitonin gene related
peptide ইত্যাদি) । যে গুলোই আসলে ব্যথার জন্যে দায়ী।
অনেক ক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টির দীর্ঘ প্রসেসে একেক রোগের ক্ষেত্রে একেক ধরনের পদার্থ তৈরি হয়। তৈরি হওয়া এসব নানা উপাদান ও সে সব জায়গায় বেশি মাত্রায় জমা হয় !!
এর একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন ধরুন - হাঁটুর Chronic Osteoarthritis। এ ক্ষেত্রে হাঁটুতে জমা হয় Pro inflammatory cytokine interleukin-1 and tumour
necrosis factor-1 alpha । সাথে থাকে কার্টিলেজ ধংসের জন্যে দায়ী matrix
metalloproteinase, stromelysin, gelatinase এবং
plasminogen activator সহ নানা কিছু।
এগুলোকেই আমরা হিজামার তাইয়্যেবাহ থিওরিতে বলছি Causative pathologic substance (CPS) যা একেক রোগে একেক রকম।
লোকাল সাইট থেকে এই সব ক্ষতিকর নানা জিনিসগুলো বের করার একটা বুদ্ধিই আসলে হিজামা!
আমরা যখন হিজামা করি, তখন এর মাধ্যমে কাপের জায়গাতে একটা নেগেটিভ প্রেশার তৈরী করা হয়। এই নেগেটিভ প্রেশারেই স্কিন এর ছিদ্রসহ Dermal
capillary থেকে প্লাজমা বাইরে আসে। আরো সাকশনে এগুলো নানা ধরনের CPS
(Causative Pathologic Substance) সহ এসে জমা হয় আমাদের স্কিন সারফেসের জাস্ট নিচে। এরপর সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম স্ক্রাচ (আচর) করা হয়। যা তৈরি করে স্কিন ওপেনিং।
আর শেষ ধাপে করা আরেকবার সাকশনেই প্লাজমাসহ বের হয়ে আসে এতক্ষণ বলা নানা পদার্থগুলো। এমনকি বড় সাইজের প্যাথলজিক মলিকিউল যেমন বিভিন্ন
Autoantibody বা C-Reactive
protein (যেমন পাওয়া যায়-
Rheumatoid Arthritis বা Connective
Tissue Diseease এ) । রিসার্চ বলে এগুলোও স্কিন ক্যাপিলারি দিয়ে হিজামা বের করতে পারে যা কিডনী ক্যাপিলারি বের করতে অক্ষম!! কারন এই ম্যানুয়ালি করা নেগেটিভ সাকশন কিডনীর ফিল্ট্রেশন প্রেসারের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ জুড়ে চলা wound
healing প্রসেসে এসব artificially inflicted wound margin এ জমা হওয়া অতিরিক্ত নাইট্রিক অক্সাইড একটা মজার কাজ করে। সেখানে সাপ্লাই দেয়া রক্তনালীগুলোর উপর কাজ করে! এগুলোকে সম্প্রসারিত করে যার ফলে লোকাল সার্কুলেশন উন্নত হয়। সর্বোপরি জয়েন্ট / অর্গান ফাংশনে ড্রামাটিক চেঞ্জ আসে।

Comments
Post a Comment